ছোটবেলায় শুনেছিলাম বুধনী মেঝানের গল্প।
সেদিন লোকমুখে হয়েছিল প্রচার অল্পসল্প।।
গল্প হয়তো জানা, হয়ত অনেকের অজানা।
গল্প হলেও সত্যি, নয়কো আমার কল্পনা।।
দামোদর তীরে,এক আদিবাসী গ্রাম,
সাঁওতাল পল্লী, কারবানা তাঁর নাম।
শান্ত নিবিড় ছায়াঘেরা কারবানা হোথা,
সভ্যতার প্রবেশ তখনো হয়নি সেথা।
বাঁধ তৈরী হোল শুরু, দামোদরের বুকে,
সবাই সপ্ন দেখে – কাটবে জীবন সুখে।
দূর গ্রামের অনেকে কাজ পেল যারা,
দিনান্তে ফিরতো গ্রামে, দল বেঁধে তারা।
এমনি করে কাটছিল দিন, নিয়ে স্বামী সংসার ।
পঞ্চদশী সাঁওতাল রমনী, বুধনি নাম তার।
বাঁধ তৈরি হল শেষ, যাত্রা হবে শুরু।
উদবোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নেহরু।।
অভ্যর্থনায় পরাবে কে টীকা ও মালা ?
বুধনীই ছিল সেদিনের ফয়সালা।
করল অভ্যর্থনা বুধনী সাঁওতাল বালা,
নেহেরুকে পরিয়ে টীকা আর মালা ।
শ্রমিকের মর্যাদা ভেবে বুধনী ছিল উপযুক্ত,
নেহরু বুধনীকে দিয়েই করলো বাঁধ উন্মুক্ত।
মুখে মুখে খবর গেল কারবানা গ্রামে,
গুঞ্জন ধিক্কার শুরু হল বুধনীর নামে।
সমাজ বলল ‘ বুধনী কৈরলেক বিহা,
গলায় মালা আর কপালে টিক দিয়া।”
নেহেরুতো সাঁওতাল লয়, বুধনী হয়েছে জাতভ্রষ্ট।
বুধনী হল গ্রাম থেকে বিতাড়িত, সবাই বলল সে নষ্ট।।
বিতাড়িত বুধনীরে দিল না কেউ এক ফোঁটা জল ।
নিরুপায় বুধনী করল গ্রাম ত্যাগ, নিয়ে চক্ষু ছলছল।।
হটাৎ করে পালটে গেল তার চেনা জগতটাই।
সমাজ করল সর্ব্বহারা, রাস্তায় হল তার ঠাই।।
প্রধান মন্ত্রী নেহরু বলেছিলেন – ইতিহাস প্রমান,
আধুনিক ভারতে পাঞ্ছেত হল “দেবালয়” সমান।
ভাগ্যের পরিহাস, মন্দিরে হল সে আছ্যুত,
বিনা কারনে ডিভিসি করলো তারে কর্মচ্যুত।।
এমনি করেই সমাজ কুসংস্কার আচ্ছন্ন,
কেড়ে নিল তাঁর ঘর সংসার, মুখের অন্ন ।।
প্রগতির বলি, বুধনী মেঝান হল নিস্বঃ।
পাঞ্ছেত ড্যাম কেড়ে নিল তার সর্ব্বস্বঃ ।।
অবশেষে মিলল ঠাই, দয়ালু দত্তবাবুর ঘরে,
ক্রমে তারা কাছে এল, বাঁধল ঘর নতুন করে।
যদিও বুধনী পায়নি তার চাকরী আর ফিরে,
তবুও তারা ছিল সুখে, কন্যা সন্তান ঘিরে।
কালের স্রোতে কেটেছে বহু কাল যখন।
হলেন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তখন।।
বুধনী গেল দিল্লী, আশায় সেদিন বুক বাঁধি।
তার দুক্ষের গল্প শুনলেন রাজীব গান্ধী।।
ফিরে পেল চাকরী সে, আশা পুর্ণ হল তার ।
গল্প হল শেষ আমার, নেইকো জানা আর।।
বুধনী হয়েছে অমর, হবে না বিস্মৃত কোনদিন
পাঞ্ছেত ড্যামের সঙ্গে বাঁচবে বুধনী চিরদিন।।
******
Composed by Anil C Mandal (21 Oct 2013)
Copyright Anil C Mandal, All rights reserved.